কারাগারে এক বছর পূর্ণ হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার। পুরানো ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের একমাত্র কয়েদী খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে কারাগারে প্রেরণ করা হয় তাকে। সেই থেকে তিনি বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। অসুস্থ শরীর। একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইল চেয়ারই ভরসা।
(দিনাজপুর২৪.কম) তার আইনজীবীরা বলছেন, কারামুক্ত হতে চারটি মামলায় জামিন পেতে হবে। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাইকোর্টের ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হলে জামিন আবেদন করবেন তার আইনজীবীরা। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে করা আপিলের জামিন আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার হত্যা মামলা ও মানহানির একটি মামলায় তার জামিন হয়নি এখনো। এসব মামলার ১৬টি অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। উচ্চ আদালতে ১১টির বিচার স্থগিত আছে। আর বাকি ২০টি মামলার কোনোটিতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে, কোনোটি তদন্তের পর্যায়ে আছে। গতকালও একটি মামলায় বিশেষ আদালতে হাজির করা হয় বেগম জিয়াকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনের সাধারণ প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা কঠিন হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় রাজপথ উত্তপ্ত করা। যতদিন পর্যন্ত রাজপথ উত্তপ্ত না হবে, ততদিন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় জেল থেকে বের করা যাবে না। এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি বলেন, আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এইজন্য কঠিন যে, বর্তমান সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া তাকে মুক্ত করা যাবে না। রাজনৈতিক কারণেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর যতটা না আইনী ভিত্তি রয়েছে, তার চেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
এদিকে পরিবার, চিকিত্সক ও দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থেকেও তার মনোবল এতটুকুও টলেনি। তবে শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচন্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। একা একা হাটতে পারেন না। খালেদা জিয়ার এক ব্যক্তিগত চিকিত্সক বলেছেন, অসুস্থ খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে তাকে থাকতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ তাকে সুচিকিত্সা থেকে বঞ্চিত করছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে ৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ৫টি, নাশকতার ১৬টি, মানহানির ৪টি, ৩টি হত্যা, মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার ২টি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি, ভুয়া জন্মদিন পালনের একটি, সাবেক নৌমন্ত্রীর ওপর বোমা হামলার একটি, জাতীয় পতাকার অবমাননার একটি, ড্যান্ডি ডাইংয়ের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন একটি এবং বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের মালিকানা নিয়ে একটি দেওয়ানী মামলা রয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
আজ বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসুচী
খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও সারাদেশে বিএনপি’র বন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আজ ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ শুক্রবার বেলা ২-৩০টায় কেবলমাত্র ঢাকায় রমনাস্থ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপি’র উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া আগামী কাল ৯ ফেব্রুয়ারী দেশব্যাপী একই দাবিতে ঢাকা মহানগরী বাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের’ কেন্দ্রীয় কমিটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার দেশব্যাপী মসজিদে জুমার নামাজে দোয়া এবং রাববার জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে সকাল ১১টায় আইনজীবীদের ‘কারামুক্তি বন্ধন’ কর্মসূচি।-ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.