(দিনাজপুর২৪.কম) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার অপসারণ এবং যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গ্রেফতারের পর এ তালিকায় রয়েছেন আরো কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। দল ও সরকারের ইমেজ রক্ষায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র বাতিল করা হয়েছে অনেকের। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, টানা সরকারে থাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় চলত মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, জুয়া, ক্যাসিনোসহ অসামাজিক ননা কার্যক্রম। কিন্তু প্রশাসন ম্যানেজ থাকায় কেউ কোনো দিন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। প্রভাবশালী এ মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে উল্টো নিজেরাই ফেঁসে যাওয়ার আতঙ্কে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠ কর্মকর্তারা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের পর সেই চিত্র বদলে গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠার পর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে অপসারণ করে পরবর্তী দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। দলের সভায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগের কয়েক নেতার নাম ধরে তাদের নানা অপকর্ম তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার চাঁদাবাজি, জুয়া ও ক্যাসিনোর কথা তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। দলে কোনো অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জুয়াড়িদের স্থান হবে না বলে হুঁশিয়ার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। সরকারের টানা ক্ষমতার সুবাদে কে কত টাকার মালিক বনে গেছেন, কে কোথায় কী করছেন সেই তথ্য আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, শুধু সম্রাট ও খালেদই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে আছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের আরো অনেক নেতা। তারা ইতোমধ্যেই নিজ নিজ এলাকায় রাজত্ব কায়েম করেছেন। সিটি করপোরেশন, শিক্ষাভবন, ওয়াসা, স্থাস্থ্য অধিদফতর, রাজউক, বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারের সব সংস্থায় নিজস্ব টেন্ডারবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এসব নেতা।
তাদের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া এসব সংস্থায় কারো টেন্ডার মিলে না। অবৈধ ক্যাসিনো, মাদক, জুয়া ও চাঁদাবাজিতেও রয়েছে তাদের নাম। যুবলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা ও সংসদ সদস্য, যুবলীগের মহানগর নেতা ও মতিঝিল এলাকার কাউন্সিলর, যুবলীগ মহানগর নেতা ও কাওরানবাজার এলাকার কাউন্সিলর, স্বেচ্ছাসেবকলীগের শীর্ষ দুই নেতা, কেন্দ্রীয় এক সাংগঠনিক সম্পাদক, দক্ষিণের এক শীর্ষ নেতাসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধেই এসব অভিযোগ রয়েছে। নানা অপকর্মের অভিযোগে ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার গণভবনের পাস বাতিল করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এ খবরে তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে দলের বিতর্কিত নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও।
বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারের আগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সিঙ্গাপুর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ আরো কয়েকজন সহযোগী তার সাথে ছিলেন। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সতর্কতার কথা শুনে তারা সেই চেষ্টা ক্ষান্ত দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, ‘সরকারের ইমেজ রক্ষায় শেখ হাসিনা যে কাউকেই ত্যাগ করতে পারেন। সে যত বড় এবং প্রভাবশালী নেতাই হোক না কেন। তার তিলে তিলে গড়া সব অর্জন এসব নেতার অপকর্মে মøান হতে দিবেন না। সে জন্যই দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তিনি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর দুইজন নেতা বলেন, ‘মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা এবং যুবলীগের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াকে দেশের জনগণ সাধুবাদ জানিয়েছে। এই দলে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নন। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি। দল ও সরকারের ইমেজ রক্ষায় বিতর্কিত কোনো নেতা বা এমপি-মন্ত্রীকেও তিনি ছাড় দেবেন না।’ -ডেস্ক