এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মো. মেজবাহ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বন্যায় জেলার মধ্যে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আমাদের কাছে আগেরও কিছু চাল মজুদ রয়েছে। এসব চালও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হবে। সার্বক্ষণিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা। সাতকানিয়ায় ১৭টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকের বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাতকানিয়া উপজেলার মধ্যে চরতি, আমিলাইষ, বাজালিয়া, কালিয়াইশ, এঁওচিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে। শঙ্খ নদীর ভাঙ্গনে কয়েকশত ঘর-বাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। চরতি ইউনিয়নের উপর ব্রাহ্মণডেঙ্গা, মধ্যম চরতি, দ্বীপ চরতি, তুলাতলী, কালিয়াইশ এলাকায় বন্যার পাশাপাশি পাহাড়ী ঢলে পানির প্রবল স্রোতে শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। মধ্যম চরতিতে একটি মসজিদ নদীতে ভেঙে গেছে। শঙ্খ নদীতে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচুতে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবনতি হচ্ছে।
সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে বন্যায় কবলিত হয়েছে। বন্যার পানিতে চরতি ও আমিলাইশ এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে বন্যা কবলিত এলাকায় চাল, মুড়ি, মোমবাতি চিনি বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। অব্যাহত ভারি বর্ষণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। পানি নিষ্কাশনের খাল ও নালাগুলো ভরাট থাকায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে হালিশহর, চান্দগাঁও, ষোলকবহর, আগ্রাবাদ, সিডিএ এভিনিউ, বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
গত কয়েক দিনে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারকে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের মতে, প্রায় ৩০টি পাহাড়ে কয়েকশত ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো আশ্রয় নেয়ার জন্য তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেলওয়ে কলোনীতে বসতিগুলোর লোকজনকে রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রায় দুইশত পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন আমরা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অনেকটা জটিল হয়ে পড়েছে। অনেকেই ৩/৪তলা ভবন নির্মাণ করেছে। ফলে উচ্ছেদ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তারপরও যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে তাদের আমরা সরিয়ে নিচ্ছি। -(ডেস্ক)