
(দিনাজপুর২৪.কম) সরকারের তরফ থেকে ‘নো কম্প্রোমাইজ’ বলার পর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপিতে কিছুটা হতাশা দেখা দিলেও দলটির নেতারা মনে করছেন, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে সরকারের সামনে একটি পথই খোলা। সেটি হচ্ছে বেগম জিয়ার মুক্তি। অন্যথায় এই সঙ্কট ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হবে। বিএনপিও খালি হাতে বসে থাকবে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের চলমান সঙ্কট তুলে ধরে বিএনপি দুই-এক দিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করবে। যেখানে সরকারের লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বেগম জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি সুনির্দিষ্টভাবে পয়েন্ট আউট করা হবে। বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সাল থেকে কারাবন্দী রয়েছেন।
সাদামাটা কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিঠি চালাচালি, আইনি লড়াই- এভাবেই বেগম জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে বিএনপি। এরই মধ্যে চলতি মাসের শুরুতে কারাবন্দী এবং বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে সরকারের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে ‘নো কম্প্রোমাইজ’ বলায় বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দুটোই দেখা গেছে।
এ দিকে খালেদা জিয়া নিজে প্যারোলে মুক্তি না নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন। এ অবস্থায় বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। এ জন্য দলটি আগামী জানুয়ারিকে টার্গেট করে এ সময়ের মধ্যে আন্দোলন সফল করার মতো সাংগঠনিক শক্তি গড়ে তুলে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের দুই দিনে দলীয় সাত এমপি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সমঝোতার যে আলোচনা উঠেছিল, তা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়েই দলীয় এমপিরা বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তির বিষয়টি নতুনভাবে দলীয় এমপিদের মাধ্যমে ফোকাস করতেই এই সাক্ষাতের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিএনপি চাচ্ছে- নতুন করে বেগম জিয়ার জামিন আবেদনের আগে দলীয় যেসব পথ খোলা আছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলে বিএনপির যারা বন্ধু কিংবা শুভাকাক্সক্ষী রয়েছেন, তাদের কাছে বেগম জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি তুলে ধরা হচ্ছে। একই সাথে শিগগিরই কিছু কর্মসূচিও নেয়া হবে, যাতে করে সরকারের ওপর একধরনের চাপ তৈরি হয়।
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ এমনি এমনিতেই মুক্তি দিয়ে দেবে, তা কোনো অবস্থাতেই ভাবছে না বিএনপি। প্যারোল না নিয়ে জামিন পেয়ে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তার আপসহীনতার কাছে ক্ষমতাসীনেরা হেরে যাবে। এ জন্য আন্দোলন ছাড়া দলীয় প্রধানের মুক্তির আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এ জন্য আন্দোলনের মাঠ প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো নেতা যাতে কোনো ধরনের কথা প্রকাশ্যে না বলে সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কারণ দলীয় এমপিদের দেশনেত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে হাসপতালে মৃত্যুবরণ করবেন তবুও প্যারোলে মুক্ত হবেন না।
বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেছেন, সাত এমপি নেত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন দিকনির্দেশনা নিতে। মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থান স্পষ্ট। তা হচ্ছে, আপস শব্দটি বেগম জিয়ার অভিধানে নেই। বেগম জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ; কিন্তু তার মনোবল এখনো অটুট। আপস করে মুক্ত হতে চাননা বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপরেও আপসের বিষয়ে যে প্রচারণা তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার মুক্তির জন্য আইনি এবং বৈধ সব পথে থাকবে বিএনপি।
কারাবন্দী খালেদা জিয়ার দিন কাটছে অসুস্থতায়। গত ১ এপ্রিল থেকে তিনি বিএসএমএমইউতে ভর্তি আছেন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা হয় তার। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলছে। বন্দিদশায় নতুন-পুরনো নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার স্বজন এবং দলের শীর্ষ কয়েক নেতা তার সাথে দেখা করেছেন। চিকিৎসাসেবা ও সুস্থতা নিয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও চিকিৎসকেরা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেছেন। বিএনপি বলছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ, চিকিৎসকদের দাবি তার উন্নতি ঘটছে। সরকারপক্ষ বলছে, তার (খালেদা) অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে। তবে পরিবারের সদস্যরা বেগম জিয়া খুবই অসুস্থতার চিত্রই তুলে ধরেছেন। -ডেস্ক