এদিকে টানা পাঁচদিনের ভারি বর্ষণের পর শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসায় জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে এখনও বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল।
টেকনাফ থানার পরিদর্শক আতাউর রহমান খোন্দকার জানান, ভারি বর্ষণে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় খাদের নিচে গড়ে তোলা বসতবাড়ির উপর পাহাড় ধসে মাটিচাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু হয়।
এরা হলেন- শামলাপুর এলাকার আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৪৫) ও মেয়ে শাহেনা আক্তার (১৫)।
রামুতে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালী নদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে রামু-মরিচ্যা-আরকান সড়ক
রামুতে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালী নদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে রামু-মরিচ্যা-আরকান সড়ক
রামুর ইউএনও মো. মাসুদ হোসেন জানান, শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজল বিল এলাকা থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দুইজনের মৃতদেহ শনিবার সকালে উদ্ধার হয়েছে।
এরা হলেন- ওই এলাকার বশির আহমদের মেয়ে কামরুন্নাহার বেগম (২২) এবং এরশাদ উল্লাহর মেয়ে তরিকা হাসনাত (৯)।
ইউএনও জানান, রামুতে দুর্গত লোকজনের আশ্রয়ের জন্য ৩৮টি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাদের শুকনো খাবার, খিঁচুড়ি, পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজনের অনেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, কাকরা ইউনিয়নে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে শুক্রবার থেকে নিখোঁজ এক কিশোর এবং কৈয়ারবিলে পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ৩/৪ বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
এদের মধ্যে কিশোর কাউছাইন রহিম (১৩) কাকরা ইউনিয়নের প্রপার কাকরা এলাকার ফরহাদ রেজার ছেলে। কৈয়ারবিল থেকে উদ্ধার শিশুর নাম পরিচয় জানা যায়নি।
পেকুয়া উপজেলার চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু জানান, শনিবার ভোররাতে সদর ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মায়ের কোল থেকে পড়ে পানিতে ভেসে গিয়ে আড়াই বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা বলেন, টানা বর্ষণে চকরিয়া, পেকুয়া ও রামু উপজেলার ৯০ ভাগ, কক্সবাজার সদরের ৭০ ভাগ এবং উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ২৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার গভীর রাত থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি নামতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় দেড় ফুট পানি নিচে নেমে গেছে।
জেলার আটটি উপজেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনওকে প্রধান করে আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া জেলার ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ১৪১টিতে দুর্গত লোকজন আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজনের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, খিঁচুড়ি ও পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গত লোকজনের মাঝে ১৪৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আটটি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে জেলায় কর্মরত সরকারি সব চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি ।
জেলা প্রশাসক অনুপম বলেন, দুর্যোগে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে রোববারের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। -(ডেস্ক)