
(দিনাজপুর২৪.কম) ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে জাতীয় বাজেট। বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে ঘাটতি বাজেট। আর এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ঋণের সুদ। আবার এ সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে ঋণ নিয়ে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের প্রায় বেশির ভাগ অর্থাৎ ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধের জন্য, যা কি না অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আর সামগ্রিক বাজেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ খাত ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে এ সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। অথচ নীতি পরিবর্তন করলে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন করা যেতো। এটা অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সঙ্কুচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।
আগামী অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন বাজেটের মধ্যে শুধু ঋণের সুদ ও সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং পেনশন পরিশোধেই ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে বিভিন্ন ঋণের সুদ পরিশোধ করা হবে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের বাজেটে ছিল ৪৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা (সংশোধিত)। এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই সরকার বাজেটের আকার বাড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়াতে পারছে না। এ কারণে ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদ ব্যয়। যেমন, গত ৫ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বেড়েছে শতভাগের বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটে সুদ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা।
অস্বাভাবিক হারে ঋণের সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে প্রতিবছরই ঋণের সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, সরকার ইচ্ছে করলেই কম সুদে ঋণ নিতে পারে। কিন্তু সে পথে সরকার হাঁটছে না। যেমন- বিদেশী ঋণের সুদ ১ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে বিদেশী ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল জানিয়েছেন, সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অভ্যন্তরীণ খাত থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়া। তিনি বলেন, ইদানীং ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে অধিক সুদ দিয়ে ঋণ নিচ্ছে। এতে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হলো সরকার কাক্সিক্ষত হারে বিদেশী ঋণ ব্যবহার করতে পারছে না। কেননা বিদেশী ঋণের সুদ অনেক কম। তিনি বলেন, বাজেটে সুদ ব্যয় কমাতে বিদেশী ঋণের ব্যবহার বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আয় বাড়িয়ে ঋণ নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। অন্যথায় ঋণ পরিচর্চা করতেই বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে যাবে। -ডেস্ক