(দিনাজপুর২৪.কম) কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার চরাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে ২০৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি গেলেই বন্ধ হয়ে যায় এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয় ভবনে পানি প্রবেশসহ চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করলেই এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান করানো সম্ভব হয় না। এ কারণেই উঁচু এলাকার তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৌগলিক কারণেই ভারত থেকে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, ফুলকুমার, জিঞ্জিরাম, সোনাভরিসহ প্রায় ১৫টি নদ-নদীই কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। শুধু মাত্র তিস্তা নদী লালমনির হাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেও তা কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত। ফলে জেলার ৯ উপজেলার ওপর দিয়েই কমবেশি প্রবাহিত এ নদ-নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপ চর রয়েছে। আর এসব চরাঞ্চলের শিক্ষাথীদের জন্য গড়ে ওঠা ২০৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বন্যার সময় ১ মাস থেকে ২ মাস পর্যন্ত পাঠদান বন্ধ থাকে। এতে করে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের। তবে উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দাবি করে আসছেন চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্ত পাঠদান বন্যা পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়া হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় ১২শ ১৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে চরাঞ্চলগুলোতে ২০৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এর মধ্যে উলিপুর উপজেলার চরাঞ্চলে ৪২, সদর উপজেলায় ২৪, চিলমারী উপজেলায় ২৪, নাগেশ্বরী উপজেলায় ৫৪, ফুলবাড়ী উপজেলায় ১৭, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ১০, রাজারহাট উপজেলায় ৬, রৌমারী উপজেলায় ১০ ও রাজিবপুর উপজেলায় ১৯টি। এর মধ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে চিলমারী উপজেলার চর খেদাই মারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুইটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে।এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে গত ১০ দিন আগে উজানের পাহাড়ী ঢলে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার সামান্য ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে ফুলবাড়ী ও সদর উপজেলায় ধরলা নদীর অববাহিকায় চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে। বাদ যায়না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। এক সপ্তাহ আগে সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর বড়াইবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অবস্থিত চর বড়াইবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ধরলা নদীর বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের ঘর-বাড়ীও বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে পার্শ্ববর্তী উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় বন্যার পানি ঘর-বাড়ি ও বিদ্যালয় থেকে নেমে না যাওয়ার পর্যন্ত তাদের নতুন করে পাঠদান শুরু করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, এ বছর এখনও তেমন বন্যা হয়নি। যদি বন্যা হয় এবং বন্যার সময় চরাঞ্চলের শিক্ষার্থী ক্লাস করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেটা বন্যা পরবর্তী সময় নির্দেশনা মোতাবেক অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে তা পুষিয়ে দেয়া হবে। বিগত বছরগুলোতে বন্যার সময় যেভাবে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়েছিল সেভাবেই করানো হবে। তাছাড়া চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বন্যার সময় সরকারিভাবে যদি কোন নির্দেশনা দেয়া হয় তাহলে সে মোতাবেক কাজ করা হবে। চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বন্যার সময় বিশেষ কোন ব্যবস্থায় পাঠদান অব্যাহত রাখার উপায় বের করে শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। -ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.