গতকাল কন্ট্রাক্ট কিলার জাহিদুল আলম কাদিরকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলিসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে হাজির করা হয়।
(দিনাজপুর২৪.কম) মহান চিকিৎসক পেশার অসৎ ব্যক্তিরা সাধারণত কিডনি চুরি ও ব্যবসা করে। কিন্তু ময়মনসিংহের এক চিকিৎসক ও তার স্ত্রী চিকিৎসা পেশার আড়ালে অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবসা করছেন। শুধু তাই নয়, তিনি একাধারে মানুষ খুন করার ঠিকাদারি নিতেন। বিদেশ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তিতে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তিকে খুনের চুক্তি সম্পাদন করতেন। এরপর তাদের ক্লুলেজ বিহীন খুনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আর ঠিক তার আগ মুহূর্তেই তিনি ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার হন। ওই চিকিৎসকের নাম ডা. জাহিদুল আলম কাদির। আর তার স্ত্রীর নাম মাসুমা আক্তার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম এদের গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ডা. দম্পতির কাছ থেকে ১৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল ৩টি, পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল-১টি, পয়েন্ট ৩২ বোর রিভলবার ৪টি, পয়েন্ট ২২ রিভলবার ১টি, ৭.৬৫ পিস্তল ৫টি ও পয়েন্ট ২৫ পিস্তল ১টি। আর উদ্ধারকৃত গুলির মধ্যে পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেলের ১১০ রাউন্ড, পয়েন্ট ২২ রাইফেলের ১১০০ রাউন্ড, পয়েন্ট ৩২ রিভলবার ৩৫৮ রাউন্ড ও পয়েন্ট ২৫ পিস্তলের ৫৪ রাউন্ড রয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্তে বিস্তারিত তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ডা. জাহিদুল আলম কাদির পেপশায় একজন ডাক্তার হলেও আইন-কিন্তু বোঝার কোনো উপায় নেই। এই পেশার আড়ালে সে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী ও পেশাদার কিলার। সে শুধু অস্ত্র ব্যবসায়ী নয়, বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতে বিশেষ পারদর্শী। এমনি একজন ডাক্তার কাম পেশাদার কিলার ডা. মো. জাহিদুল আলম কাদির ও তার সহযোগী তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের হেফাজত থেকে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৬২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৫ মে ডা. মো. জাহিদুল আলমকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২টি পিস্তল এবং ৮ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে দায়েরকৃত মামলায় রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩ জুন গাবতলী এলাকা হতে তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে ১টি বিদেশি পিস্তল ও ৪ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত মাসুমা আক্তারকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে তার তথ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পারেন যে, ডা. জাহিদুল আলম কাদিরের কাছে আরও বিপুল পরিমাণ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাদ করে। একপর্যায়ে তার কাছে আরও বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ থানার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ডা. জাহিদুল আলমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ময়মনসিংহ জেলার বাঘমারা এলাকার তার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি তার নিজ বাসায় বিশেষভাবে তৈরিকৃত একটি স্টিল কেবিনেটের পেছনে রাখা হয়েছিল। মনিরুল ইসলাম জানান, ডা. জাহিদুল আলম গত ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সরকারি বা স্থায়ী কোনো চাকরি করতো না। সে গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চাকরি করতো। সে চিকিৎসা পেশার অন্তরালে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতো। আর বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতে বিশেষভাবে পারদর্শী। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে অস্ত্রের আকার আকৃতি পরিবর্তন এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সে অনেক দক্ষ। শুধু তাই নয়, পেশাদার কিলার হিসেবে সে বেশ কয়েক জায়গায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পূর্বেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডা. জাহিদুল আলমের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী এবং পেশাদার খুনিদের সখ্য রয়েছে। আর ডা. জাহিদুল বেশকিছু অস্ত্র বৈধ অস্ত্র বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আর যেসব বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা তার কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি করেছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে জানান তিনি। -ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.