(দিনাজপুর২৪.কম) সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে চলছে তর্ক বিতর্ক। একটি মেয়ের ফিগার ৩৬-২৪-৩৬ থাকলেই যে সে সুন্দরী এর কোন প্রমানও নেই । আসলে সুন্দরী সংঙ্গা নিধারণ করা নেই । ভারতে দ্বাদশ শ্রেণির হেলর্থ অ্যান্ড ফিজিক্যাল এডুকেশন’ নামে এক পাঠ্য বইয়ে মেয়েদের আদর্শ শারীরিক গঠন বলতে লেখক ভি কে শর্মা ৩৬-২৪-৩৬ উল্লেখ করেছেন । এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেখক লিখেছেন, মিস ওয়ার্ল্ড বা মিস ইউনিভার্সের মতো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাতেও এই ফিগারই আদর্শ ধরা হয়। এবার সেই সব সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে লিখেছেন – জিয়া উল ইসলাম
প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতা প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। প্রাচীন গ্রিসে এই প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করা হয়। গ্রিক জনপদ করিন্থের জনগণের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল নতুন শহর ব্যাসিলিসের উদ্বোধন উপলক্ষে করিন্থের শাসক কিপসেলাস এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন। সে সময় এই প্রতিযোগিতাটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি প্রতিযোগিতাটিতে শুধুমাত্র সুন্দরের বিচার করা হয় না। এখানে শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। তবে অনেকে মতে এ সব প্রতিযোগিতায় নারীর বুক , কোমর , পশ্চাৎদেশের বেড় যক্রাক্রমে ৩৬-২৪-৩৬ ফিগারই আদর্শ ধরা হয় । এখানে যে শুধু সাদা চামড়া মেয়েরা সুন্দরী নিবার্চিত হয় তা কিন্তু নয় এখানে কৃষ্ণবর্ণের নারী সুন্দরী নিবার্চিত হয় ।
সুন্দরীর নির্বাচিত হয়ে যা করতে হয় যিনি সুন্দরী নির্বাচিত হন তাকে একটি কোম্পানির হয়ে কাজ করার জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। যদি চুক্তিপত্র অনুযায়ী সে কাজ না করে তাহলে তার শাস্তি স্বরুপ তাকে দেওয়া মুকুটটি কেড়ে নেওয়া বা বাতিল করা হয়।
প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করার নিয়ম যে কেউ চাইলেই ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। নিজ দেশে আয়োজিত সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ীরাই শুধুমাত্র এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রতিবছর ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতাটি আরম্ভ হওয়ার আগে বিভিন্ন দেশের কাছে নির্বাচিত সুন্দরীর তালিকা চাওয়া হয়। তবে যদি কোনো দেশ জাতীয়ভাবে কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন না করে তবে ‘মিস ইউনিভার্স’ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেই দেশ থেকে প্রার্থী নির্বাচন করে। ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হয়। বিভিন্ন রাউন্ড শেষে সেরা ৫ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সেমিফাইনাল রাউন্ড। এখান থেকে সেরা তিনজন প্রতিযোগীকে নির্বাচন করা হয়।
মিস ইউনিভার্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। কিন্তু রক্ষণশীলতার কারণে সে সময় খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি প্রতিযোগিতাটি। এক সময় বাঁধার মুখে প্রতিযোগিতাটি বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর প্রতিযোগিতাটির ধরন একটু পরিবর্তন করে ‘ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ নামে নতুন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এভাবে কিছুদিন চলার পর ১৯২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার শুরু হয়। তবে প্রথম দিকে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় প্রতিযোগিতাটি। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে কর্মরর্ত সুন্দরী নারী নির্বাচন করার জন্য প্রতিযোগিতার আরম্ভ হয়। ১৯৫১ সালে আরও একটি সংক্ষিপ্ত ভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । ১৯৫২ সালে আয়োজন করা হয় ‘মিস ইউনিভার্স’ ও ‘মিস ইউএসএ’ প্রতিযোগিতার। ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার সেরা সুন্দরীর মুকুট জয় করেন ফিনল্যান্ডের ‘আরসি কুন্সিলা’। ১৯৫৫ সালে এসে ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতাটি টেলিভিশনে প্রচার করা শুরু হয়। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ‘প্যাসিফিক মিলস’ নামে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ক্লথিং কোম্পানি এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করতো। ১৯৯৬ সালে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০১ সাল পর্যন্ত তারা এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে। বর্তমানে মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে আসছে।
মিস ওয়ার্ল্ড মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিকিনি প্রতিযোগিতা উৎসবকে প্রতিপক্ষ করে। এতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সাম্প্রতিককালে প্রস্তুতকৃত সাঁতারের পোষাককে প্রদর্শন করা হয়েছিল যা প্রচার মাধ্যমে মিস ওয়ার্ল্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটির পরিকল্পনা হয় একটি সাধারণ ঘটনা হিসেবে। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এরিক ১৯৫১ সালে মোর্লে সিদ্ধান্ত নেন যে, সাঁতারের পোশাক প্রর্শনীটি বাৎসরিক ভাবে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা হিসেবে জনসমক্ষে তুলে ধরবেন। বিপক্ষের বিকিনি পরিধানের প্রদর্শনীর বিকল্প হিসাবে আধুনিক সাঁতার পোশাক পরিধান প্রদর্শনীটি ১ম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তুলে ধরা হয়। ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ ব্রটকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসি মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতাটি সর্ব প্রথম সরাসরি সম্প্রচার করে। ২০০০ সালে এরিকের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর স্ত্রী জুলিয়া মোর্লে প্রতিযোগিতার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন । প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গেনাইজেশন সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে পরবর্তী এক বছরের জন্য ভ্রমণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়ভার প্রদান করে থাকে।
মিস মুসলিম ওয়ার্ল্ড সুন্দরী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই মুসলিম বিশ্বও। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত হয় ‘মিস মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ প্রতযোগিতা। ১৯ জন ফাইনালিস্টের দেহ গলা পর্যন্ত পোশাকে আবৃত ছিল আর মাথায় ছিল স্কার্ফ। নাইজেরিয়ার ২১ বছর বয়সী ওবাবিয়ি আয়েশা আজিবোলা তাতে প্রথম হন।
মিস বিগ এরাবিয়ান বিউটি বিভিন্ন আরব দেশের সুন্দরীদের অংশগ্রহণ এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয়। স্থূল শরীরের আরব তরুণীরাই কেবল এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভোটের ভিত্তিতে সেরা প্রতিযোগী নির্বাচিত করা হয়। পোশাকের ওপর, স্যুইমসুটসহ হাঁটার ওপর, সান্ধ্যকালীন পোশাকএ তিনটি ক্যাটাগরিতে ২০ ভাগ করে মোট ৬০ ভাগ ভোট নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ৪০ ভাগ ভোট নেওয়া হয় বিচারক প্যানেল থেকে। লেবাননের লেবানিজ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন আয়োজন করে থাকে।
কারাবন্দিদের সুন্দরী প্রতিযোগিতা কলম্বিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবাই অপরাধী। কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, চোর আর হত্যাকারীর আবাসস্থল বলে পরিচিত কলম্বিয়ার এল বুয়েন প্যাস্টর উইমেন’স প্রিজন প্রতি বছরই সেখানকার কারাবন্দিদের জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে। বন্দিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই প্রতি বছর এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
মিস হোমলেস গৃহহীনদের সমস্যা সম্পর্কে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দাতব্য সংস্থা আর্টেফিক্সের উদ্যোগে ‘মিস হোমলেস’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে? এতে যিনি বিজয়ী হতেন তাঁকে এক বছর বিনা ভাড়ায় কোথাও থাকতে দেয়া হতো?
মিস অ্যাটম পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে সাধারণ মানুষের মনের ভয় দূর করতে ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাশিয়াতে ‘মিস অ্যাটম’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়? পরমাণু কেন্দ্রে কর্তব্যরত কর্মী ও পরমাণু বিষয় নিয়ে পড়–য়ারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন?
পক্ষপাতমূলক বিচার সুন্দরী প্রতিযোগীতায় যে শুধু এখন পক্ষপাত মুলক বা ফলাফল কারচুপি হয় তা কিন্তু নয় । খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ১ম সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফলাফল করিন্থের জনগণের কাছে ছিল যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ সে প্রতিযোগিতায় করিন্থের শাসক কিপসেলাসের স্ত্রীও প্রতিযোগী ছিলেন। বিচারকরা পক্ষপাতমূলক বিচার করে কিপসেলাসের স্ত্রীকেই সেরা সুন্দরী নির্বাচিত করে। বর্তমানে এই পক্ষপাতমূলক বিচার বা ফলাফল কারচুপি থেকে রক্ষা পাইনি ২০১৭ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নামের সুন্দরী প্রতিযোগিতাও; এখানে অনেক র্তক-বির্তক পর প্রথমবার বিজয়ী হওয়া জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিয়ে জেসিয়া ইসলাম কে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয় ।
লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার বাংলাদেশেও সুন্দরীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতাটি। চ্যানেল আই ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এর যৌথ আয়োজনে এই প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সুন্দরী প্রতিযোগিতার মতো এই প্রতিযোগিতায়ও শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য এর মাপকাঠিতে বিজয়ী নির্বাচন করা হয় না। পাশাপাশি অন্যান্য গুণও এখানে বিবেচনা করা হয়। যে নিবার্চিত হয়ে সেরার মুকুটটি অর্জন করেন তিনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগের পাশাপাশি পুরস্কার হিসেবে পান একটি ব্যান্ড নিউ গাড়ি ও অভিনয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ।এই প্রতিযোগিতার প্রথমবার বিজয়ীর মুকুট পরেন শানারৈ দেবী শানু। -ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.