(দিনাজপুর২৪.কম) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সভায় ব্যাপক হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিলাসবহুল জীবনযাপন, নেতাদের মূল্যায়ন না করা, কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনা, তৃণমূলের কমিটি না হওয়া, ফেসবুকে অভ্যন্তরীণ বিষয় লেখা, গঠনতন্ত্র না মানা, কমিটিতে বিবাহিত ও চাকরীজীবীরা বহাল থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়। জানা যায়, সভায় উত্থাপিত অধিকাংশ প্রশ্নেরই সদুত্তোর দিতে পারেননি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তবে আগামী ২৬শে জুলাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সভায় নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। বুধবার গুলিস্তানে নগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাকক্ষে সকাল ১০টায় সাধারণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়। বর্তমান কমিটির মেয়াদে এটিই প্রথম সাধারণ সভা ছিলো। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি দুই মাস পরপর সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় নি। সূত্র জানায়, আগস্ট মাসের কর্মসূচি, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংগঠনের ভূমিকা এবং বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসব নিয়েই আলোচনা করার জন্য সাধারণ সভা ডাকা হয়। শান্ত পরিবেশে সভায় শুরু হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সভায় ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সম্পাদক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন। দামি গাড়িতে চড়েন। আর আমাদের পকেটে টাকা থাকে না। বিভিন্ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে টাকা আনেন। সে টাকা যায় কোথায়? তখন কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ বলেন, কোন কোন জায়গা থেকে টাকা আনি লিস্ট দেন? এ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে ভাগ হয়ে পড়েন নেতারা। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এসময় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ওই নেতা আরও বলেন, আগামী ২৬শে জুলাই এ কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে কি হলো? তখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করেন। একই বিষয়ে কিছুদিন পূর্বে ছাত্রলীগ সভাপতি একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, নেত্রী যখন বলবে তখনই সম্মেলন হবে। সভায় ওই যুগ্ম সম্পাদক বলেন, কথায় কথায় বিভিন্ন ইস্যুতে আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এসব কথা কি জানেন? আপনারা প্রথমে ওনাকে জানান। তারপর ওনার কথা বলেন। সম্মেলন দিতে না পারলে নেত্রীর পরামর্শ নিয়ে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেন। না হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমাদের হিসাব আমরা করবো। সভায় উপস্থিত এক সহ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক জাকিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে আমি তিনবার কল দিয়েছি। কিন্তু আপনি কল ধরেন নি। রিপ্লাইও দেন নি। আমি একজন সহ সভাপতি হয়ে আপনাকে ফোনে না পেলে জুনিয়ররা কিভাবে পাবে? তিনি আরও বলেন, আগের কমিটিগুলোতে দেখেছি, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে নেত্রীর কাছে নিয়ে যেতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিলো। তারা ছবি তুলতো। কথা বলতো। কিন্তু এবার সেধরনের কোন কিছুই হচ্ছে না। আরেকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের কাজ হচ্ছে। আপনারা সব টেন্ডার নিয়ে নেন। আমরা টেন্ডারের ভাগ পাই না কেন? সভায় মহানগর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া এক নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধাণ্যের কথা উল্লেখ করলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা নেতারা তাকে বসিয়ে দেন। অন্য এক সহ সভাপতি বলেন, তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি ঝুঁলে রয়েছে। তারিখ ঘোষণা করেও সম্মেলন হচ্ছে না। সামনে নির্বাচন আসতেছে। কমিটি না হলে সংগঠন সেখানে কিভাবে কাজ করবে? তখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভিন্ন এলাকায় কমিটি করতে হলে ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে কমিটিগুলো করা হবে বলে জানান তারা। সভার শেষে সভাপতির বক্তব্যে সাইফুর রহমান সোহাগ ফেসবুক নিয়ে বলেন, আপনারা সেলফি তুলে দেন। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো তুলে ধরনে। কিন্তু জামায়াত-বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে পারেন না? তখন এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সে দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতো। যখন দেখছে কোন কাজ হয় না তখন আর লিখে না। এসময় ওই নেতা সভাপতির বক্তব্যের বিরোধীতা করে বলেন, আমি এখনও লিখি। সভাপতি তার বক্তব্যে সবাইকে দলের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড প্রচার ও বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম লিখার আহ্বান জানান। সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনও ফেসবুক নিয়ে একই বক্তব্য দেন। সভায় বিবাহিত ও চাকরীজীবীদের আগামী ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। -ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.