মোঃ আফজাল হোসেন (দিনাজপুর২৪.কম) দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আকরাম হোসেন মন্ডলের বিরুদ্ধে নির্বাচনের সময় তাঁর ঋণ খেলাপীর তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হাকিমপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. হারুন উর রশীদ ২০১৪ সালের ৪ মে দিনাজপুর নির্বাচন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ এর ৮ (২) ঞ ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে অযোগ্য যিনি মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার তারিখে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃৃহিত কোন ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী রাখেন। মোঃ হারুন উর রশীদ জানান, বিধি অনুযায়ী মামলা দায়েরের ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও দিনাজপুরের নির্বাচন ট্রাইবুনাল মামলাটি নিষ্পত্তি করেননি। বাধ্য হয়ে হারুন উর রশীদ এবছর ২৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্টের বিচারক কাজী রেজাউল হক এবং মোহাম্মদ উল্লাহ দিনাজপুর যুগ্ম জেলা জজ-১ এবং নির্বাচন ট্রাইবুনালের বিচারককে মামলাটি কেন নিষ্পত্তি করা হবেনা তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে রুল জারি করেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ম্যানেজার (অপারেশন) কালীপদ মহন্ত জানান, ২০০৭ সালে তাঁদের ব্যাংকের শাখা থেকে নেওয়া ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ৪৫ হাজার ২২৫ টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকটি ২০১০ সালের ২৮ মার্চ নওগাঁ অর্থ ঋণ আদালতে আকরাম হোসেন সহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নাম্বার-১/২০১০। মামলাটি এখনও চলমান। মামলা দায়ের পর তথ্যটি বাংলদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠানো হয়েছিলো। হারুন উর রশীদ জানান, নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফ নামায় আকরাম হোসেন ঋণ খেলাপীর এ তথ্যটি সম্পূর্ন গোপন করেন। এছাড়াও নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের ঋণ খেলাপীর বিষয়টি রির্টার্নিং কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া সিআইবি থেকে নিশ্চিত করার কথা ছিলো। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে নির্বাচন কার্যালয় ঋণ খেলাপীর বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। নির্বাচনের পর বিষয়টি জানতে পেরে হারুন উর রশীদ দিনাজপুর নির্বাচন ট্রাইবুনালে মামলা করেন। হারুন উর রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ-২০০৮ এর ১৩ ধারার ৩ এর উপধারা (১) অনুযায়ী নির্বাচন ট্রাইবুনাল পরিষদের নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোন মামলা দায়েরের ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। অথচ রহস্যজনক কারনে গত সাড়ে তিন বছরেও মামটি নিস্পত্তি হচ্ছেনা। প্রমাণিত একটি বিষয়ে আদালতের রায় প্রদানের দীর্ঘ সূত্রিতার কারনে তিনি ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে নির্বাচনগুলোতে অপরাধীরা নির্বাচনে উৎসাহিত হবেন। হাকিমপুর নির্বাচন কার্যালয়ের দেওয়া আকরাম হোসেনের হলফনামায় দেখা যায়, আকারাম হোসেন মন্ডল ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপীর এবং এ সংক্রান্ত মামলার কোন তথ্য দেননি। শুধু মাত্র জনতা ব্যাংকের হাকিমপুর শাখা থেকে ১০লক্ষ টাকা ঋণ থাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন। দিনাজপুর নির্বাচন ট্রাইবুনাল সূত্রে পাওয়া নথি থেকে দেখা যায়, মামলাটি দায়েরের পর থেকে ৩২ কার্য দিবস হাজিরা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিচারক এগারোটি ধার্য তারিখে অন্য মামলায় ব্যস্ত থাকার কথা উল্লেখ করে মামলার আদেশ দেন নি। দিনাজপুর নির্বাচন কর্মকর্তা মোছা. জাকিয়া সুলতানা জানান, কোন প্রার্থী ঋণ খেলাপী কি না বিষয়টি রির্টার্নিং কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবির মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে। সে সময় যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি বিধান থাকলেও সাড়ে তিন বছরেও মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাকিয়া সুলতানা জানান, বাংলাদেশে একমাত্র সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত মেয়াদ থাকা অবস্থায় নির্বাচনী মামলার রায় পেয়েছিলেন। বিষয়টি আদালতের। এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে চাননা। হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন মন্ডল ঋণ খেলাপী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে তাঁর নাম থকার কথা স্বীকার করে দাবী করেন, তিনি ঋণ খেলাপী নন। জামিনদার ছিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.