(দিনাজপুর২৪.কম) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলতে অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষার্থীদেরকে মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, দেশকে ভালভাবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতা যে সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার ছেলে-মেয়ে চেয়েছিলেন-এইতো আমার সোনার ছেলে-মেয়ে সবাই। এরাই তো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশকে উন্নত করবে, সমৃদ্ধশালী করবে। দেশ সে পথেই এগোচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারে না। রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০১৬ এবং ২০১৫ সালের এর নির্বাচিত জাতীয় পর্যায়ের সেরা ২৪ জন মেধাবীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি সরকারি স্কুল, সরকারি কলেজ আমরা করব, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি এবং যেসব এলাকায় কোন সরকারি স্কুল কলেজ নাই তারা একটা তালিকা আমরা করে ফেলেছি। পরে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনসংখ্যা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার ইচ্ছেও আমাদের রয়েছে। শিক্ষাখাতে সরকারের অর্থ ব্যয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে কখনও আমি খরচ মনে করি না। এটা হচ্ছে একটা বিনিয়োগ। যেটা জাতির পিতাই আমাদের শিখিয়ে গেছেন।’ অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের হাত প্রধানমন্ত্রী এক লাখ টাকার চেক, মেডেল এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন। তিনটি বয়স বিভাগে ভাষা-সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ২০১৫ এবং ১৬ সালের মোট ২৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহবার হোসাইন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। ২০১৫ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে দিনাজপুরের শিক্ষার্থী শাকিল রেজা ইফতি এবং ২০১৬ সালের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাকার সিরাজুল মুস্তাকিম শ্রাবণী নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়য়ের অতিরিত্ত সচিব পুরষ্কার বিতরণী পর্বটি পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমরা শিক্ষানীতিমালা প্রণয়ণ করেছি, সেই নীতিমালায় প্রযুক্তি শিক্ষা, আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর যেমন গুরুত্ব দিয়েছি তেমনি ধর্ম শিক্ষাটাকেও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি। অর্থাৎ সার্বজনীন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বিনে পয়সায় মাধ্যমিক শ্রেনী পর্যন্ত সারাদেশে বিনামূল্যে বই দিয়ে যাচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি, আগে বাবা-মা’র যেই বোঝাটা ছিল বই কেনার, এখন সেই দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। এটাও কিন্তুু স্বাধীনতার পর জাতির পিতা প্রথম শুরু করেছিলেন। তিনি সীমিত আকারে বিনা পয়সায় বই দেয়া শুরু করেছিলেন। মেয়েদের শিক্ষা ইতোমধ্যেই দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত অবৈতনিক করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাষ্ট্রের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও সরকার বৃত্তি প্রদানের উদ্যাগ নিয়েছে। পয়সার অভাবে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য সরকারের এই উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের খন্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটি জাতির পিতার স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার ব্যতীত আর কোন সরকারই অর্জন করতে পারেনি। তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায়ে আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের ফ্রি ল্যান্সিং করে নিজ গ্রামে বসে আয়ের পথ করে দিচ্ছ,তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু শিক্ষা দিলেই হবে না। শিক্ষার পরে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগটাও করে দিতে হবে। যাতে করে তারা তাদের মেধাটা কাজে লাগাতে পারে। আর এই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের পথ চলা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে। ..এখন বাংলাদেশকে সবাই মনে করে উন্নয়নের রোল মডেল। বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে দেশিয় অগ্রগতির তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত অনেক দেশই যা পারে নাই। আমরা তা পেরেছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আরও স্কুল কলেজ ব্যাপকভাবে করে দিচ্ছি। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলগুলো দুর্গম এলাকা-সেখনে আবাসিক স্কুল তৈরী করে দেয়ার উদ্যোগ শুরু করেছি। চরাঞ্চল বা দ্বিপাঞ্চল-যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধা সেখানেও আমাদের উদ্দেশ্যে সরকারী স্কুল করে দেয়া এবং আবাসিক করে দেয়া যাতে শিক্ষার্থীদের কোন অসুবিধা না হয়। প্রতিদিন বড়ো বড়ো খাল-বিল,নদী-নালা পার হয়ে কষ্ট করে স্কুলে যাতায়াত করতে না হয়। তিনি শিক্ষার্থীদের মনযোগ দিয়ে পড়ালেখার আহবান জানিয়ে বলেন,‘প্রত্যেককে মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। কারণ লেখাপড়া সব থেকে বড়ো সম্পদ। এর থেকে বড়ো সম্পদ আর কিছুই নেই।’ ধন-সম্পদ একদিন শেষ হয়ে গেলেও লেখাপড়ার কোন ক্ষয় নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সম্পদ কেউ কোন দিন কেড়ে বা ছিনতাই করে নিতে পারবে না। বাড়ি-গাড়ি,টাকা-পয়সা,ধন-দৌলত হারাতে পারে। কিন্তুু,শিক্ষা কোনদিন হারাবে না। জ্ঞান অর্জন করতে পারলে সেই জ্ঞানই হয় শক্তি।’-ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.