(দিনাজপুর২৪.কম) নিজেদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির কারণে বাংলার সেই সোনালী সঙ্গীত সময় আজ অতীত। আর এরকম পরিস্থিতি বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী ও প্রখ্যাত ব্যান্ড দল এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু বলে উঠলেন, ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। গানে গানেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব বাংলার সেই জৌলুসময় সময়কে। তারজন্য তাহলে কি করতে হবে? আইয়ুব বাচ্চু বলেন, আগে নিজেদের মধ্যে একতাবদ্ধ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিভক্তি মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়, আর বিভক্তি নিয়ে কিছু করা সম্ভবও না। বাংলা সঙ্গীতের এই ক্ষয়িষ্ণু সময়ে একাত্মতা খুব দরকার।
হ্যাঁ। এভাবেই বাংলার নবীন, প্রবীন শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিলেন কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। সমৃদ্ধশালী দেশীয় সঙ্গীতের বিশাল আয়োজন নিয়ে সম্মেলিত সঙ্গীতশিল্পী সোসাইটির উদ্যোগে শুরু হচ্ছে সঙ্গীতমেলা ২০১৬। শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ক্যাফে থার্টি-থ্রি’তে হয়ে গেল সেই সঙ্গীতমেলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন। আর এখানেই বাংলার শিল্পী এবং মিউজিক নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরকে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানান শিল্পী ও দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু।
চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া সঙ্গীত মেলা সম্পর্কে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, আমি আসলে টোটাল ব্যাপারটা জানি না। শুধু এটুকু জেনেছি একটা মেলা হবে, এবং সেখানে প্রচুর শিল্পী আসবে, গান হবে ইত্যাদি ইত্যাদি…। আর এটা শুনেই বিস্তারিত না শুনে আমি এখানে এসেছি। এই মেলা আয়োজনের সাথে আমি একমত, এবং সহমত পোষণ করছি।
বাংলা সঙ্গীতে দ্বিধা বিভক্তি থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব না জানিয়ে আইয়ুব বাচ্চু আরো বলেন, আমরা সবাই শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমার কথা আমি বলতে পারি যে, আমি এখনো শিল্পী হতে পারেনি। হয়তো বাকিরা হয়ে গেছেন।আমি কেন শিল্পী হয়নি কারণ শিল্পী হওয়াটা এতো সহজ কিছু না। এতো সহজেই শিল্পী হওয়া যায় না। এটা সাধনার কাজ। আমি লম্বা চুল রাখলাম, আর শিল্পী হয়ে গেলাম ব্যাপারটা মোটেও এত সহজ নয়। শিল্পী বলতে হবে শাহ আব্দুল করিম, আব্দুর রহমান বয়াতি, মাহমুদনবী সাহেবদেরকে শিল্পী বলতে হবে। কারণ তারা গান বাজনার মাধ্যমে একটা পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে গেছেন। শিল্পী উনারাই। আর আমরা যারা শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করছি আমাদেরকে একটা জিনিষ মনে রাখতে হবে যে, আগে নিজেদের মধ্যে একতাবদ্ধ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিভক্তি মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়, আর বিভক্তি নিয়ে কিছু করা সম্ভবও না। একাত্মতা খুব দরকার।
গান বাজনার আগে নিজের দেশকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে আইয়ুব বাচ্চু আরো বলেন, আমরা কেন নিজের মা, মাটি দেশকে ভালোবাসতে পারবো না। গান বাজনাতো অনেক দূরের ব্যাপার, আগে নিজের মা মাটি দেশতে ভালোবাসতে শিখুন। এদেশের মানুষ সঙ্গীত প্রেমি, একটু যদি সঙ্গীতের দিকে তারা তাকান সহযোগিতা করেন তাহলে ভালো করা সম্ভব। তাই সবার উদ্দেশে আমার কথা থাকবে সবাই যেন সবাকে ভালোবাসি, ভালোবাসার পথে নিয়ে আসি।
সঙ্গীতের সমালোচনা যেন গঠনমূলকভাবে করা হয় সে আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আপনার সঙ্গীত একটু ভালো হচ্ছে, আর আমারটা একটু খারাপ হচ্ছে বলে গালাগাল করবেন এটা খুবই খারাপ। একজনের গানের সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু সেটা যেন গঠনমূলক হয়। সোশাল মিডিয়ায় এটা খুব ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে এখন।
সঙ্গীত মেলার কর্তৃপক্ষকে এমন উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, মেলা আয়োজনের উদ্যোগটা নেয়ার জন্য সম্মেলিত সঙ্গীতশিল্পীর কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এই মেলার সাফল্য কামনা করি। এবং এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে শিখি যে, গান বাজনা, খেলা পরে, আগে হচ্ছে আমাদের মা মাটি দেশ।
অন্যদিকে সঙ্গীতমেলার সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক হাসান মতিউর রহমান গণমাধ্যম ও বাংলার গানপ্রেমী সাধারণ মানুষকে এই মেলায় শরীক হতে আহ্বান জানান। গণমাধ্যমে তিনি বহুল প্রচারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এবং বলেন, গণমাধ্যম চাইলেই সঙ্গীতের এই সংকট সময়ে তাদের প্রচারণার বদৌলতে মিউজিকে একটা প্রাণ সঞ্চার হবে। যা হয়তো বাংলা সঙ্গীতে আশা ব্যঞ্জক হতেও পারে। সকলের পদচারণায় সঙ্গীত মেলা উৎসবমুখর হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল দশটায় শুরু হয়ে গান চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। আর পুরো অনুষ্ঠানটি তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সকালে বাংলার লোক গান ও বাউল গান পরিবেশন করা হবে, দুপুরে জনপ্রিয় সলো আর্টিস্টদের গান, আর সন্ধ্যা থেকে চলবে বাংলার ব্যান্ডদলগুলোর গান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রখ্যাত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, গতবার গান মেলা শুরু হয়েছে, এবারও হচ্ছে। এটা খুবই আনন্দের। মনে হচ্ছে সুন্দর কিছু শুরু হতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মত আরেক গুণীশিল্পী এসএম তারেকও এই মেলাকে ঘিরে বাংলার সব শিল্পীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। এবং এটাকে শিল্পীদের জন্য একটা বিশাল প্লাটফর্ম বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেণ বয়েজ অব আমেরিকার প্রখ্যাত সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরি। ভরাট কণ্ঠে তিনিও বলেন, ২০১০ সালে বয়েজ অব আমেরিকা থেকে রিটায়ার্ড হয়েছি। প্রায় ৪৪ বছর আমেরিকা ছিলাম। কিন্তু কখনোই নিজের দেশের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়নি। বাংলা সঙ্গীতের সঙ্গেও বিচ্ছেদ ঘটেনি। সঙ্গীত আসলে এমন একটা জিনিষ যা ছাড়া জীবন চলতে চায় না। মানুষের সুখে সঙ্গীত, দুখেও সঙ্গীত। আমি চাইবো বই মেলার মত গান মেলাও যেন নিয়মিত হয়। আর বাংলাদেশের শিল্পীদের বলছি, তারা যেন প্রবাসের দিকেও একটু ফিরে তাকান। প্রবাসী মানুষেরাও তাদের গান শুনতে চায় সরাসরি। তাছাড়া প্রবাসেতো একটা বাণিজ্যিক দিকও আছে। বিশেষ করে আমেরিকায়।
রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী সাদি মুহাম্মদ কিছুটা দুঃখ প্রকাশের ভঙ্গিতে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গান গাইছি কিন্তু আামার কোনো সিডি নেই। এই মেলাকে ঘিরে শতাধিক গানের অ্যালবাম রিলিজ হবে শুনে আনন্দ লাগছে।
এছাড়া সঙ্গীত মেলার এই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন নজরুল সঙ্গীতশিল্পী খালিদ, নবীন শিল্পী লুবনাসহ অনেকে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা গানের সঙ্গে জড়িত অনেক গুণী শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার। সংবাদ সম্মেলন শেষে নতুন পুরনো সবাই মিলে একসঙ্গে গ্রুপ ছবিতেও অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া সম্মেলিত সঙ্গীতশিল্পীদের উদ্যোগে আয়োজিত সঙ্গীতমেলা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। মেলার উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সঙ্গীতশিল্পী ও এমপি মমতাজ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে সঙ্গীতশিল্পীদের এই মহামিলনকে কেন্দ্র করে বাংলা গানের জগতে অবদান রাখার জন্য ২৫ গুণীশিল্পীকে দেয়া হবে সম্মাননা। সঙ্গীত মেলার এই আটদিনে অন্তত শতাধিক অ্যালবাম প্রকাশ করা হবে। মেলা প্রাঙ্গনে থাকবে ২টি সেমিনার ও ৪ টি ওয়ার্কশপ। আগত দর্শকদের বাংলা গানের ইতিহাস ও বিবর্তন সম্পর্কে জানাতে রাখা হবে ২০০ফিট দীর্ঘ টাইমলাইন। শিল্পীদের সঙ্গে দর্শকের জন্য স্মৃতি ধরে রাখতে রাখা হবে একটি সেলফি বোর্ড। -ডেস্ক
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Notify me of follow-up comments by email.
Notify me of new posts by email.