(দিনাজপুর২৪.কম) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীর দুর্গাপূজা। গতকাল বিকালে জয়ধ্বনি ঢাকঢোল ও কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রাসহ শতাধিক প্রতিমা নিয়ে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে বিসর্জন দেয়া হয়। সন্ধ্যায় সেখানে দেখা মেলে বিষাদের করুণ চিত্র। আবার আসার আবাহনের মধ্য দিয়ে লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। সার্বজনীন পূজা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীর বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বিনাস্মৃতি স্নানঘাটে আদি মরণচাঁদ, নবকল্লোল পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীর দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বিকাল থেকেই। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে যান কৈলাসে স্বামীর ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন পিতৃগৃহ এ ধরণীতে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন, গেলেন দোলায় (পালকি) চড়ে। দশ দিন আগে মণ্ডপে মণ্ডপে মহালয়ায় এ উৎসবের সূচনা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে বিহিত পূজা আর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঘটে দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি। আর একদিন পর শুক্রবার হলো প্রতিমা বিসর্জন। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি জানান, বিভিন্ন ঘাটে রাজধানীর ২২৫টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন হয় সাগরসৈকতে। একইভাবে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে দেয়া হয় বিসর্জন। ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, মূলত দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে আগের দিনই দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে মাকে নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে। বিসর্জনের আগে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব। দুপুরে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড়ে। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনী বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চস্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার মানুষের এ শোভাযাত্রার সময় বিভিন্ন সড়কে জট দেখা যায়। পলাশী থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গা তীরে শেষ হয় শোভাযাত্রা। প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার পর ভক্তকুল শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠে। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের জানান, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন। এবার ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ, নগরীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, শাঁখারী বাজার, তাঁতীবাজার এলাকায় ভিড় ছিল বেশি। আর বনানী মাঠে আয়োজিত দুর্গাপূজার নানা আনুষ্ঠানিকতা সবার নজর কাড়ে। -ডেস্ক