(দিনাজপুর২৪.কম) বদলে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন অনেক আত্মবিশ্বাসে ভরপুর রয়েছে। মাশরাফির নেত্রীতে বাংলাদেশ দল যেন নতুন করে জ্বলে উঠতে শিকছে। গত বছর দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর থেকেই এমন আত্মবিশ্বাসের বাতাস লেগেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দারুণ খেলার পর একে একে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষেও ওয়ানডে সিরিজ জয় করে নেয় টাইগাররা। এবারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষায় মাঠে নামছে মাশরাফিবাহিনী।
রবিবার দুপুর ১টায় মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টোয়েন্টি২০ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।ক্রিকেটের যে কোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশের চেয়ে খুব ভাল ব্যবধানে এগিয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিঃসন্দেহে তাই এবারের বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ঘিরে নতুন মাত্রার কৌতুহল, আগ্রহ-উদ্দীপনা ক্রিকেটাঙ্গনে। মাশরাফিরা যেমন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভয় পাচ্ছেন না; দক্ষিণ আফ্রিকাও আবার মুখে আত্মবিশ্বাস দেখালেও জোর দিয়ে জয়ের কথা বলতে পারছে না। বাংলাদেশ দলের সীমিত ফরম্যাটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অতীত পরিসংখ্যানে বিচলিত না। তারা বলছেন, অতীতের পরিসংখ্যান দেখে তো আর ক্রিকেট খেলা হয় না। আর এই পরিসংখ্যান ম্যাচের ভাগ্যও নিয়ন্ত্রণেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। ক্রিকেট হল মাঠের খেলা। জয় তারাই পাবে নির্দিষ্ট দিনে মাঠে যারা ভাল খেলবে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা বলছে, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ খেলছে। তাদেরকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই আমাদের।
দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনের বিপক্ষে অনেকটাই দুর্বল। এমন ভাবনা থেকে রবিবার বাংলাদেশ দলের বোলিং শক্তি স্পিন নির্ভর হওয়ারই সম্ভবনা বেশি। তাই একাদশে দেখা যেতে পারে সাকিবের সঙ্গে বিষেশজ্ঞ আরও দুজন স্পিনার।
সম্প্রতি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নতুন নিয়ম করেছে বা আগের কিছু নিয়মে পরিবর্তন করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। আর সেই নতুন নিয়মে বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম সিরিজটিই খেলছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়মের সুবিধা শতভাগ কাজে লাগাতে মরিয়া থাকবে দুই দলই।
তবে টোয়েন্টি২০ ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান মোটেও ভাল নয়। এ যাবতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪২ ম্যাচ খেলেছে; জিতেছে মাত্র ১২টিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের দুটি টোয়েন্টি২০ ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে টাইগাররা। ২০০৭ সালে কেপটাউনে ৭ উইকেটে হার মানে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে জোহানেসবার্গে ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হারতে হয়েছে টাইগাররা। শেষ অব্দী ওই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হার মানে ১২ রানে। তবে এবারে ইতিহাসটা পাল্টে ফেলতে বদ্ধপরিকর মাশরাফিবাহিনী।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলা একমাত্র টোয়েন্টি২০ ম্যাচটি। গত এপ্রিলেই দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে পরাজিত করেছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশ দলের বদলে যাওয়ার পিছনে যে তরুণ ক্রিকেটাররা ভূমিকা রাখছে, তাদেরই বেশি ভয় পাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অতিথিদের টোয়েন্টি২০ দলের অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস শনিবার প্রাক-ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে তেমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বেশ কিছু ক্রিকেটারকে নিয়েই ভাবতে হচ্ছে আমাদের। দলটির দারুণ একটি ব্যাপার হলো, নতুন অনেক ক্রিকেটার বেশ ভাল খেলছে। বিশেষ করে টোয়েন্টি২০ ম্যাচে এই তরুণরা খুব বিপদজ্জনক হতে পারে প্রতিপক্ষের জন্য।
তবে প্রতিপক্ষের জন্য যে কোনো মুহূর্তে বিপদজ্জনক হয়ে দাঁড়ানোর মতো অনেক ক্রিকেটার রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকানদের দলেও। আর তাদের মধ্যে সবচাইতে উজ্জ্বল নামটি অবশ্যই এবি ডি ভিলিয়ার্স। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান হিসেবে যাকে অভিহিত করা হয়েছে। সন্দেহ নেই, মিরপুরের মাঠে রবিবার এই ভিলিয়ার্সকে ঠেকানোই হবে মাশরাফিদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য মাশরাফি শনিবার বলেছেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা অনেক দিন ধরেই ভাল করছে। তবে আমাদের বোলারদেরও সামর্থ্য রয়েছে ম্যাচ জেতানোর।
বাংলাদেশ আগের দুটি সিরিজে পেস সহায়ক উইকেটে খেলেছে। কিন্তু এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হিসাবটা পাল্টে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। কারণ, প্রোটিয়াদের স্পিনের বিপক্ষে অনেকটা দুর্বল। যদিও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলে খেলার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের অনেকেই এখন স্পিনের বিপক্ষে সাবলীল ব্যাট চালাতে পারে। বাংলাদেশের ঘূর্ণি বলের বিপরীতে সেই অভিজ্ঞতাকেই ভরসা মানছেন প্লেসিসরা।
নিষিদ্ধ বোলিং অ্যাকশনের ত্রুটি সারিয়ে প্রায় ১০ মাস পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন বাংলাদেশের স্পিনার সোহাগ গাজী। প্রথম টোয়েন্টি২০ ম্যাচের একাদশে আরাফাত সানির সঙ্গে তাকেও দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া সাকিব আল হাসান ও পার্ট টাইমার নাসির হোসেন তো রয়েছেনই।
প্রতিপক্ষের বোলারদের সীমানার বাইরে ছুঁড়ে ফেলতে অভ্যস্ত দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। তাদের ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসে বড় বড় ছক্কা। তাদের বোলিংয়েও রয়েছে বৈচিত্র্য। আর ফিল্ডিং তো বরাবরই মাস্টারক্লাশ। তবে নিজেদের দিনে তামিম-মুশফিক-সাকিবরাও প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হতে পারেন; নাসির-সাব্বির-সৌম্যরা এনে দিতে পারেন জয়ের হাসি। সেই সঙ্গে মাশরাফি-র“বেলরা যেমন গতির ঝড়ে উইকেট কাঁপানোর ক্ষমতা রাখেন, স্পিনের মায়াজালে সাকিবরা তেমন পারেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ড্রেসিংর“মের পথটা চিনিয়ে দিতে। রবিবার তাই মিরপুরে জমজমাট এক টোয়েন্টি২০ ক্রিকেট লড়াই দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা। বলে রাখা ভাল, এই লড়াইয়ে বাড়তি আকর্ষণ হয়ে থাকছেন বাংলাদেশের তরুণ ‘পেস বিস্ময়’ মুস্তাফিজুর রহমনা। পাকিস্তান-ভারতের নামজাদা ব্যাটসম্যানদের বধ করার পর ভিলিয়ার্সদের বিপক্ষে মুস্তাফিজ কি করেন, তা এব বড় কৌতুহল বটে! -(ডেস্ক)